মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:৪৫ পূর্বাহ্ন
মো. সুজন মোল্লা,বানারীপাড়া॥ বরিশালের বানারীপাড়ার সকলের প্রিয় সম্রাট (৭০) চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ইন্না.. রাজিউন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ২ ছেলে ও ১ মেয়ে,নাতী,নাতনী সহ অনেক গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বুধবার রাত ১২ টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাছরং গ্রামের (ফায়ার সার্ভিস অফিসের সামনে) নিজ বাড়িতে তিনি পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলতে বলতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। বৃহস্পতিবার বাদ জোহর বানারীপাড়া ফায়ার সার্ভিস মাঠে মরহুমের জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে তাকে “স¤্রাট” উপাধী দেয়াদের মধ্যে অন্যতম বানারীপাড়া হাই-কেয়ার (বধীর) স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক আব্দুল হাই বখস সহ ওই সময়ের অনেকেই ছুটে যান স¤্রাটের বাড়িতে। এ সময় আব্দুল হাই বখস তার স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে আবুল হোসেন’র জীবনী বলেন। তার পুরো নাম মো. আবুল হোসেন। পাকিস্তান আমল এবং পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশ।
এই দু’ই আমলেই মো. আবুল হোসেন ওরফে স¤্রাটের রায়েরহাট বাজারে ছিলো একটি ছোট্ট চায়ের দোকান। তার ওই দোকানে ক্রেতারা চা খেতে আসলেই আবুল হোসেন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য যাত্রা পালার রাজা-বাদশাদের মতো সবাইকে বলতেন,জাহাপানা আদেশ করুন আপনাদের জন্য কি ধরণের চা বানাবো। আর চায়ের সাথে কি খাবেন। এভাবে আবুল চাচা চা বনাতো আর যাত্রা পালায় দেখা রাজা, বাদশা, সম্রাট চরিত্রের কথামালার নাটকীয় ভঙ্গিতে অনর্গল অভিনয় করতেন অবিকল সম্রাটদের মত।
আবুল চাচা দোকানে যতটুকু সময় বসতেন ওই সময়ে তার দোকানে আসা সকল ক্রেতাদের সাথেই রাজা-বাদশাদের মতো কথা বলতেন। আবার কোন দরিদ্র মানুষ তার দোকান থেকে কিছু খেলে তাদের কাছ থেকে কোন টাকা-কড়ি নিতেন না আবুল চাচা। এভাবে বন্ধু-বান্ধব এবং ক্রেতাদের সাথে কথা বলার কারণে এক সময় আবুল চাচাকে সকলে মিলে স¤্রাট উপাধী দিলেন। তার কিছুদিন পর থেকে আবুল হোসেন নামে তাকে অনেকেই চিনতেন না।
কেবল এলাকার মানুষই চিনতেন। সেই থেকে আবুল হোসেনের উপাধী হয়ে যায় “সম্রাট”। আমৃত্যু সে সকল মানুষের কাছে ” সম্রাট” নামেই পরিচিত ছিল। পরে সময়ের সাথে চলতে গিয়ে সহজ-সরল আবুল চাচা তার দোকানটি টিকিয়ে রাখতে পারেননি। এক প্রকার বাধ্য হয়েই ছেড়ে দিতে হয়েছিলো তাকে।
এমনকি তার জীবদ্ধশায় নিজ পৈত্রিক সম্পত্তি’ও সম্পূর্ণ ভাবে ভোগদখল করে যেতে পারেননি তিনি। তবে নিজে দরিদ্র হলেও অন্যসব দরিদ্র মানুষের প্রতি ছিলো তার প্রখর ভালোবাসা। তার প্রমান করেছেন চায়ের দোকান হাতছাড়া হবার পরে একজন চোখের ডাক্তারের সাথে থেকে নিঃস্বার্থ ভাবে সাধারণ মানুষের সেবা করে।
Leave a Reply